রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ - ১১:১৪
ইমামের বৈশিষ্ট্য; “ইসমাত বা অপরাধমুক্ততা”

যদি ইমাম ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত না হন, তাহলে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরেকজন ইমামের প্রয়োজন হবে। আর যদি সেও ভুল থেকে মুক্ত না হয়, তাহলে আরেকজন ইমামের প্রয়োজন হবে, এবং এই ধারা অসীম পর্যন্ত চলতে থাকবে। যুক্তি অনুযায়ী, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ এবং ইমামতের মৌলিক শর্ত হলো “ইসমাত বা অপরাধমুক্ততা”। 

“ইসমাত বা অপরাধমুক্ততা” হলো একটি গুণ যা সত্যের সুস্পষ্ট জ্ঞান এবং সুদৃঢ় ইচ্ছা থেকে জন্ম নেয়। ইমাম এই দুটি গুণের অধিকারী হওয়ায় তিনি যে কোনো পাপ বা ভুল করা থেকে বিরত থাকেন। 

ইমাম ধর্মীয় জ্ঞান বোঝা ও ব্যাখ্যা করা, সেগুলো অনুশীলন করা এবং ইসলামী সমাজের সুবিধা-অসুবিধা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ভুল ও ত্রুটি থেকে মুক্ত। 

ইমামের ইসমাত বা অপরাধমুক্ততার জন্য যুক্তিগত এবং কুরআন ও হাদিসভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে। প্রধান যুক্তিগত প্রমাণগুলি হলো: 

১. ধর্ম এবং ধার্মিকতার পথ সংরক্ষণ ইমামের অপরাধমুক্ততার উপর নির্ভরশীল। কারণ ইমামের দায়িত্ব হলো ধর্মকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করা এবং মানুষকে ধর্মীয় পথে পরিচালিত করা। শুধু তাঁর কথা নয়, তাঁর আচরণ এবং অন্যের কাজের প্রতি তাঁর সমর্থন বা অস্বীকৃতি সমাজের আচরণে প্রভাব ফেলে। তাই ধর্ম বোঝা এবং তা অনুশীলনে তাঁকে সকল প্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে, যাতে তিনি তাঁর অনুসারীদের সঠিকভাবে পথ দেখাতে পারেন। 

২. সমাজের ইমামের প্রয়োজনীয়তার একটি কারণ হলো, মানুষ ধর্ম বুঝতে এবং তা পালন করতে গিয়ে ভুল করা থেকে মুক্ত নয়। এখন যদি মানুষের নেতাও একই রকম হন, তাহলে কীভাবে তিনি তাদের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পারেন? অন্য কথায়, যদি ইমাম অপরাধমুক্ত না হন, তাহলে মানুষ তাঁর অনুসরণ এবং তাঁর সব নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সন্দেহে পড়বে। 

তাছাড়া, যদি ইমাম ভুল থেকে মুক্ত না হন, তাহলে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরেকজন ইমামের প্রয়োজন হবে। আর যদি সেও ভুল থেকে মুক্ত না হয়, তাহলে আরেকজন ইমামের প্রয়োজন হবে, এবং এই ধারা অসীম পর্যন্ত চলতে থাকবে। যুক্তি অনুযায়ী, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। 

কুরআনের কিছু আয়াতও ইমামের ইসমাত তথা অপরাধমুক্ততার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। এর মধ্যে একটি হলো সূরা বাকারার ১২৪ নং আয়াত। এই আয়াতে বলা হয়েছে, “নবুয়তের মর্যাদার পর আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ইমামতের উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।” এরপর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর বংশধরদের মধ্যেও ইমামতের মর্যাদা যেন থাকে। 

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

لَا یَنَالُ عَهْدِی الظَّالِمِینَ
(আমার প্রতিশ্রুতি [ইমামত] অত্যাচারীদের কাছে পৌঁছায় না); অর্থাৎ ইমামতের পদ কেবল ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সেই বংশধরদের জন্য নির্ধারিত যারা অত্যাচারী নয়। 

এখন যেহেতু কুরআন আল্লাহর সাথে শিরককে মহা অত্যাচার হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করাকে (অর্থাৎ পাপ) নিজের উপর অত্যাচার হিসেবে গণ্য করেছে, তাই যে কেউ জীবনের কোনো পর্যায়ে পাপ করেছে সে অত্যাচারী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ইমামতের মর্যাদার অযোগ্য হবে। 

অন্য কথায়, নিঃসন্দেহে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ইমামত চাননি তাঁর সেই বংশধরদের জন্য যারা সারা জীবন পাপ করেছে অথবা প্রথমে ভালো ছিল কিন্তু পরে মন্দ হয়ে গেছে। তাই দুই ধরনের মানুষ অবশিষ্ট থাকে: 

১. যারা প্রথমে পাপ করেছিল কিন্তু পরে তাওবা করে ভালো হয়ে গেছে। 

২. যারা কখনো পাপ করেনি। 

আল্লাহ তাঁর বাণীতে প্রথম দলটিকে ব্যতিক্রম করেছেন। ফলে ইমামতের মর্যাদা শুধুমাত্র দ্বিতীয় দলের জন্য নির্ধারিত। 

চলবে...

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha